(বিজ্ঞান গল্প) অন্য সময় কল্প পোস্ট করেছেনঃ Farhad 4 Comments পড়ার টেবিলে বসে সীমা গনিতের অনুশীলনী গুলোর সমাধান করছে। ক্লাশ এইটের মেধাবী ছাত্রী। বরাবরই পরীক্ষায় প্রথম হয়। গ্রাম্য একটি স্কুলের শ্রেণীতে প্রথম হতে হয়তো বেশী মেধার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু সীমার আছে গডগিফটেড (জন্মগত) কিছু ক্ষমতা। স্কুলের অংক-বিজ্ঞানের শিক্ষকরা সব সময় তটস্থঃ থাকে কখন কোথায় সীমা তাদের অজান্তে করা ভুলটি বের করে ফেলে বা এমন কোন প্রশ্ন করে বসে যার উত্তর দিতে ঘাম বের হয়ে যাবার অবস্থা হয়। গ্রামের বাড়ীর টিনের ঘর। বাড়ীতে আর কেউ নেই। বাবা বাজারে আর মা গেছে পাশেই মামার বাড়ীতে, ছোট একটা ভিটা পেরিয়ে। ছোটভাই মনে হয় খেলার মাঠে পৌঁছে গেছে এতক্ষনে। বেশ গরম পড়েছে। ভিতরের ঘরে দেয়ালের দিকে মুখ করে সীমা পড়ার টেবিলে বসে। এতে পড়ার প্রতি মনোযোগ অক্ষুন্ন থাকে। বাতাসের প্রয়োজনে সব দরজা জানালা খোলা। কোথায় যেন খুট করে একটা শব্দ হলো। কান পাতলো সীমা। না, আর কোন শব্দ নেই। অনুশীলনীতে আবার মন দিলো। হঠাৎ শরীরটা কেন যেন শিরশির করে উঠলো সীমার। পিঠের কাছে কি কারো নিঃশ্বাস পড়লো! ঘুরে দেখতে গেলো সে। কিন্তু তার আগেই মুখ-চোঁখ ঢেকে গেলো মোটা চাদরে। কেউ শক্ত করে পেঁচিয়ে ধরে চাদরটা আরও চেপে বসালো মুখে। চেচিয়ে কাউকে ডাকবে, কোন শব্দই করতে পারছে না সীমা।এরপর যা ঘটলো তার জন্যে কোনভাবেই প্রস্তুত ছিলো না সীমা। বাঁধা দেওয়ার সব রকমের চেষ্টা করেই ব্যর্থ হলো সে। জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ হারিয়ে সে অনুভূতিহীন নীরব পাথরে পরিনত হলো! সেই সময়১৫ মে ২০১১। সকাল ১১টা।পুলিশের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট, সিআইডি (CID) এর জাদরেল ইন্সপেক্টর অমিতা বসু পুরনো একগাঁদা ফাইল নিয়ে ঘাটাঘাটি করছে। বিষয় গত ৫০ বছরের নামকরা সব সিরিয়াল কিলিং ঘটনা। এরিয়া সারা বাংলাদেশ। এরকম ১৭টি বিভিন্ন সিরিয়াল কিলারের অস্তিত্ব জানা যায়। এর মধ্যে ১৪ জনকে ধরে আইনের আওতায় আনা হয়। বাকী ৩জনের কোন টিকির ছোয়া পায় নি পুলিশ বাহিনী।সিরিয়াল কিলার বলতে বুঝায় এমন একজন খুনী যে নির্দিষ্ট কোন কারনে বা কোন কারন ছাড়াই শুধুমাত্র বিকৃত রুচি চরিতার্থ করতে একই স্টাইলে একের পর এক হত্যাকান্ড ঘটায়। প্রতিটি সিরিয়াল কিলারের সাধারনত নির্দিষ্ট প্যাটার্ণ থাকে হত্যাকান্ডের। এই প্যাটার্ন দ্বারাই ঐ সিরিয়াল কিলারকে ধরার চেষ্টা করা হয়।যেমন এক সিরিয়াল কিলার মহব্বতজান খান। তার এলাকা ছিলো সিলেট। ১৯৭৭ এর এপ্রিলে প্রথম সে হত্যা করে ২০ বছর বয়সী এক তরুনীকে। চিকন নাইলনের রশি গলায় ব্যবহার করে হত্যাকান্ড ঘটায়। পরবর্তী দুই বছরে সে ২১টি একই রকম ঘটনা ঘটায় সিলেট শহরে। টার্গেট ছিলো ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সী নারীরা। পরে সে ধরা পড়ে এর জাঁদরের পুলিশ অফিসারের হাতে। বিচারে ফাঁসী হয়ে যায় তার।এরকম টেংকু জামাল, কামাল মুসা, মীর মীরন.... ১৪ জন সিরিয়াল কিলারের ফাইল নিয়ে স্টাডি করছেন অমিতা বসু। সাথে ৩টা আনসলভড সিরিয়াল কিলার মিস্ট্রি নিয়ে গবেষনা।৫০ বছরে এই ১৭ সিরিয়াল কিলার মোট ৩২০টি হত্যাকান্ড ঘটায় দেশজুড়ে। বিভ্রান্ত সময়২৭ আগস্ট ১৯৯৩। সন্ধ্যা ৭টা। রমনা পার্ক।মীর মীরন বসে আছে পার্কের এক কোনের বেঞ্চে। অনেকক্ষন ধরে অপেক্ষায় আছে সে। প্রতিদিন এ সময়টায় পার্কে এসে কিছুক্ষন হাটাহাটি করে লোকটি। জানে আজও আসবে। গত ২৫ দিনের পর্যবেক্ষনে এ নিয়মের কোন বাত্যয় দেখে নি। এটাই মীরনের প্রথম শিকার। বুকটা একটু কি কেঁপে উঠলো তার? প্রচন্ড বদরাগী মীরন। কিন্তু সেটা মনে মনে। কখনো কেউ তাকে জোরে একটা কথাও বলতে শুনে নি। কারো সাথে কথা কাটাকাটি হওয়ার উপক্রম হলে সেই প্রথমে আত্মসমর্পন করে। কারো সাথে কখনো মারামারি হয় না। প্রচন্ড রাগটাকে মনে মনেই কবর দেয় মীরন। কিন্তু আর কত! আর কত সহ্য করবে সে? এবার আর নয়। এক মাস আগে লোকটা গুলিস্থান মাজারের সামনে সরাসরি সামনে থেকে ধাক্কা লাগায় মীরনের বুকে। কিছু বুঝে উঠার আগেই রাস্তার গড়াগড়ি যায় মীরন। উঠে দাড়িয়ে ধুলা পরিষ্কার করতে যাবে আবার ধুলায় পপাত ধরণীতল। এবার লোকটা ইচ্ছে করেই ধাক্কা মেরে ফেলে দিলো। সাথে বকাবকির ফুলঝুড়ি, যেন প্রথম ধাক্কাটা মীরনেরই দোষ। কিছুই বললো না মীরন। আবার উঠে ধুলা পরিষ্কার করতে লাগলো। আশেপাশে কিছু লোক জমা হয়ে মজা দেখছে। মুহুর্তে চরম হতাশা আর প্রচন্ড বিরক্তি ভয়ংকর ক্রোধে রূপ নেয়। ধাক্কা দেওয়া সেই লোকটা, আশে পাশে জমা হওয়া মানুষগুলো, আর পুরো সমাজের উপরে এক কঠিন বিতৃষ্ণা জমে তার মনে। ঠিক করে এবার সে প্রতিশোধ নিবেই। যথেষ্ট হয়েছে আর নয়। আর কাউকে কখনোই ছাড় দেওয়া যাবে না।ধুলো ময়লা পরিষ্কার করে নীরবেই সরে পড়ে সে। কথা কাটাকাটি, মারামারি, ঝগড়া মীরনের কাজ নয়। সে তার নিজের মতো করে প্রতিশোধ নিবে। প্রতিশোধ নিবে অসুস্থ এ সমাজের নোংরা কীটগুলোর উপরে যারা প্রতিনিয়ত অপরের দুর্বলতার সুযোগ নেয়। তখন থেকেই লোকটাকে অনুসরন করতে থাকে মীরন। লোকটার পিছে পিছে বাসে মগবাজার। সেদিনই তার বাসার ঠিকানা চিনে নেয়। পরে নিয়মিত ফলো করে তার রুটিন সম্পর্কে জেনে নেয়।আজ সেই দিন। আজকেই কাজটা শেষ করবে মীরন ঠিক করেছে। এরপর আর কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। মীরনের ঠিক পিছনেই একটি বয়স্ক মহিলা এসে দাড়ালো। বয়স হবে ৪৫ এর মতো। সাথে ছোট একটি হাতব্যাগ। -আপনি মীরন!চমকে উঠে মীরন। ঝট করে দাড়িয়ে পড়ে। ঘুরে পিছনে তাকায়। এই মেয়েটিই কি কথা বললো?- কিন্তু আপনি কে?-আপনি মীর মীরন। বাড়ী জামালপুর। বাবা মীর মাসুম। মা রাহেলা বেগম। আপনি পীর ইয়ামেনী মার্কেটে নুপুর শাড়ী বিতানে হিসাব রক্ষক হিসেবে চাকুরী করেন।-হ্যা, কিন্তু আপনাকে তো চিনতে পারছি না।দীর্ঘ একটা মুহুর্ত কিছুই বললো না মহিলা। আর মীরন যেন সম্মোহিতের মতো চেয়ে থাকলো তার দিকে। এরপরের ঘটনা ঘটে গেলো দ্রুত গতিতে। চটপটে মহিলা তার হাতব্যাগ থেকে একটা কোল্ট রিভলবার বের করে সরাসরি মীরনের কপালে দুটি বুলেট ঢুকিয়ে দিলো। রিভলবারে সাইলেন্সার লাগানো থাকায় খুব একটা শব্দ হলো না। আশেপাশের লোকজন কিছু বুঝে উঠার আগেই চোখের পলকে ভ্যানিশ হয়ে গেলো সে।অন্য সময়১৫ মে ২০১১। সকাল ১১টা।পুলিশের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট, সিআইডি (CID) এর জাদরেল ইন্সপেক্টর অমিতা বসু পুরনো একটা ফাইল নিয়ে বসেছেন। ফাইলটা তার নিজেরই তৈরী। গত ৫০ বছরের ১৪টা রহস্যময় হত্যাকান্ড সমম্বিত করে বানানো। এরিয়া সারা বাংলাদেশ। প্রতিটি হত্যাকান্ডের ধরন একই। সরাসরি মাথায় দুটি করে গুলি করে নির্মম হত্যাকান্ড গুলি করা হয়। নিশ্চয়ই এটা কোনো সিরিয়াল কিলারের কাজ!ফাইলটা নিয়ে আবার গবেষনায় মেতে উঠলো অমিতা। অবসরে এটা তার একটি প্রিয় কাজ। নিজেরই তৈরী করা কেসটার বিভিন্ন পয়েন্টগুলো আবার পড়তে লাগলো-১) এ সিরিয়াল কিলার ৪০ বছর (১৯৬০ থেকে ২০০০) বছর ধরে হত্যাকান্ড ঘটিয়ে গেছে। এরকম দীর্ঘ সময়ের সিরিয়াল কিলার মনে হয় সারা পৃথিবীর কোথাও ছিলো না। ২) হত্যাকান্ডে রিভলবার ব্যবহুত হলেও গুলীর অবশিষ্টাংশ পরীক্ষা করে তার সাথে কোন আগ্নেয়াস্ত্রের গুলীর হুবহু মিল পাওয়া যায় নি। ৩) ব্যবহৃত গুলির অবশিষ্টাংশ যে গুলো পাওয়া গেছে তা হুবহু এক। আর দেখা গেছে তা একই রিভলবার থেকে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ ৪৫ বছর জুড়ে খুনী একই রিভলবার ব্যবহার করে গেছে।৪) কয়েকটা ক্ষেত্রে খুনীর আঙ্গুলের ছাপ পাওয়া গেছে। কি মনে করে আঙ্গুলের ছাপের একটা কপি নিলেন অমিতা। ইমার্জেন্সী ট্যাগ লাগিয়ে আইটি সেকশনে পাঠালেন ন্যাশনাল ডেটাবেজে চেক করার জন্যে। ২০ মিনিটের মধ্যেই যখন নাম-ঠিকানা-ছবি সহ একটা রিপোর্ট চলে আসলো বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলেন ইন্সপেক্টর অমিতা।ঐতিহ্যবাদী এক বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের নামকরা প্রফেসর ডঃ রাশিদা রাহাত সীমা। বয়স ৪৪ বছর।কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব! ১৪টি খুনের প্রথমটি ঘটে ১৯৬০ সালে। আর প্রফেসর রাশিদা'র জন্মই ১৯৬৬ সালে!!অনেক অজানা প্রশ্নের উত্তর জানার চেষ্টায় প্রফেসর রাশিদা'র সাথে এপয়েন্টমেন্ট ঠিক করে নিলেন ইন্সপেক্টর অমিতা। বিকাল পাচটায়প্রফেসরের বাসায়।বিকাল ৫টা ১০ মিনিট।প্রফেসর রাশিদার স্টাডি রুমে তার সামনে বসে আছেন ইন্সপেক্টর অমিতা। অমিতা এসেছেন সিভিল ড্রেসে-তদন্তটাকে এখনই অফিসিয়াল করতে চান না তিনি।ইন্সপেক্টর তার তৈরী করা বিশেষ ফাইলটা নিয়ে এসেছেন। পরিচয় পর্ব শেষ। দুজনেই রং চা পান করছেন। প্রফেসরই প্রথম কথা বললেন। -আমি জানি ইন্সপেক্টর আপনি কেন আমার সাক্ষাতপ্রার্থী।এবার বিস্ময়ে বাকহারা হয়ে গেলেন অমিতা। প্রফেসর আবার মুখ খুললেন--আপনার ফাইলটা দেখতে পারি?অমিতা মন্ত্রমুগ্ধের মতো ফাইলটি এগিয়ে দেয়। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পুরো ফাইলটা দেখলেন প্রফেসর। তাকে সস্তুষ্ট মনে হলো। ফাইলটি ফেরত দিয়ে তিনি উঠলেন। লক করা ফাইল কেবিনেট থেকে আরেকটি পেটমোটা ফাইল বের করে এগিয়ে দিলেন ইন্সপেক্টরের দিকে। ফাইলটি হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করলেন অমিতা। যতই পড়তে লাগলেন ততই তার মাথা ঘুরতে লাগলো। ফাইলের সিল-সিগনেটচার দেখে মনে হচ্ছে এটা ইন্সপেক্টর অমিতারই তৈরী। এ ফাইলের বিষয় বস্তু ১৭জন সিরিয়াল কিলার ও তাদের হাতে নিহত ৩২০ জন ভিকটিম। অথচ এ ফাইল অমিতা কখনোই দেখেন নি। আর ১৭ জন সিরিয়াল কিলারের নাম পরিচয় ১৪ জন অমিতার জানা। তারা অমিতার আনা ফাইলের ১৪ জন ভিকটিম।চিন্তা ভাবনা উল্টা-পাল্টা হয়ে যেতে লাগলো অমিতার। প্রফেসরকে কেন যেন তার এক জটিল মানসিক রোগী মনে হতে লাগলো। যে কিনা অমিতাকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।এবার প্রফেসর কথা শুরু করলেন। -ইন্সপেক্টর অমিতা। আপনার হাতে যে দুটো ফাইল আছে দুটোই আপনার নিজ হাতে তৈরী। আর দুটোই সঠিক। আপনি হয়তো ভাবছেন এটা কিভাবে সম্ভব। সেটাই আমি ব্যাখ্যা করবো। সাথে আপনিও খুঁজে পাবেন আপনার বর্তমান ফাইলের ১৪ হত্যাকান্ডের খুনীকে। একটু দম নিলেন প্রফেসর। হয়তো ভাবলেন কোথা থেকে শুরু করবেন।-পিএইচডিতে আমার গবেষনার বিষয় ছিলো সময়পরিভ্রমন এর সম্ভাব্যতা। সেখানে আমি এমন কিছু সূত্র আবিষ্কার করি যার মাধ্যমে সময় পরিভ্রমন করা সম্ভবপর বলে আমার মনে হয়েছিলো। কিন্তু সূত্রগুলো আমি চেপে যাই আমার গবেষনাপত্রে। চেপে যাওয়ার কারন হলো, সময়ভ্রমন যদি সম্ভব হয় তাহলে মূহুর্তে পুরো পৃথিবীর বিশাল পরিবর্তন করে দেওয়া সম্ভব এর মাধ্যমে। অথচ পরিবর্তনটা ভালো না খারাপ তা বলা যাবে না আগে থেকে।ঠান্ডা চা'এর কাপে আনমনে চুমুক দিলেন প্রফেসর।-দেশে ফিরে আমি আমার সূত্রগুলো নিয়ে আরও ব্যাপক কাজ শুরু করি। এক সময়ে নিশ্চিত হই তত্ত্বগতভাবে সময় পরিভ্রমন সম্ভব। এর পরে এরকম একটি যন্ত্র বানানোর কাজ শুরু করি। বিষয়টা আসলে এতো সহজ ছিলো না। প্রথমে ভেবেছিলাম গাড়ী বা রকেটের মতো একটা যন্ত্র বানাবো যার ভিতরে থেকে আমরা সময় পরিভ্রমন করতে পারবো। কিন্তু সেটা আমার কাছে গ্রহনযোগ্য মনে হয় নি। পরে চিন্তা করি এটা হতে পারে ঘড়ির মতো ছোটখাটো একটা যন্ত্র। এটি একজন মানুষকে নিয়ে সময় পরিভ্রমন করতে পারবে। এরকম আকারেই আমি আমার টাইম ট্রাভেল মেশিনটি তৈরী করি। তবে টাইম মেশিন আকারে ছোট হওয়ায় এর সময় পরিভ্রমন সীমাও কম। সর্বোচ্চ ১০০ বছর আগে পরে এটি যেতে পারে।অমিতার মনে হলো সে একটা জলজ্যান্ত পাগলের সামনে বসে আছে। হয়তো কয়েকটা খুন করে সে নিজেও পাগল হয়ে গেছে বা পাগলের ভান করছে। একে এখনই হাজতে ভরা উচিত।-আপনি জানেন না ইন্সপেক্টর! শুধু আপনি কেন আমি ছাড়া আর কেউ জানে না যে আমার ভয়ংকর কষ্টকর একটা অতীত আছে। এখনো দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুমের মধ্যে চিৎকার করে উঠি। টাইম ট্রাভেল যন্ত্রটাকে আমি আমার যন্ত্রনা দূর করার কাজে ব্যবহার করতে চেয়েছিলাম। তবে প্রথমে চিন্তা করি আরো কিছু ভালো কাজ করা যায় কিনা। সমাজের দুষিত কীটগুলোকে ধ্বংস করা আর নিরীহ কিছু মানুষকে রক্ষা করতে পারাটাকেই আমার অনেক বড় কাজ মনে হয়। -কয়েকটি মাধ্যম থেকে আমি আপনার নাম জানতে পারি যে আপনার কাছে বাংলাদেশের বড় বড় সব সিরিয়াল কিলারের লিস্ট আছে। আপনার সাথে যোগাযোগ করে আমি সেটা সংগ্রহ করি। আপনি নজেই আমার বাসায় এসেছিলেন আমার হাতের এই ১৪ জন ধৃত সিরিয়াল কিলার ও তাদের ভিকটিমদের লিস্ট নিয়ে। বিস্তারিত আপনাকে না জানালেও আমি বলেছিলাম এর একটা সমাধান আপনাকে দেওয়ার চেষ্টা করবো। কিন্তু সেটা ছিলো অন্য এক সময়। আমি অতীতে গিয়ে একে একে ১৪ জন সিরিয়াল কিলারদের কিল করে আসি তারা কিল শুরু করার আগেই। ফলে তাদের ভিকটিমরা বেঁচে যায়। -এর ফলে টাইম লাইনে কিছু পরিবর্তন হয়ে যায়। আপনার রেকর্ডও সেইমত পরিবতন হয়ে যায়। আপনার দেওয়া লিস্টটা আমার সাথে সাথেই থাকতো সময় পরিভ্রমনের সময়। তাই সেটি অক্ষত থাকে সেই পরিবর্তন থেকে।মলিন হাসলেন প্রফেসর।-এই নিন ১৪ খুনের আসামী আপনার সামনে হাজির। গ্রেফতার করুন তাকে। দুঃস্বপ্নের তাড়ায় বলতে গেলে কখনোই সুস্থ জীবন-যাপন করতে পারি নি। ঘর-সংসার করতে পারি নি। বাবা-মা মারা গেছেন অনেক আগে। একমাত্র ছোটভাই বিদেশে। এ বাড়ীতে আমি একা একাই থাকি। জীবনে আমার আর কিছু চাওয়া পাওয়ার নেই।চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বসে থাকেন অমিতা। কিছুই মাথায় ঢুকছে না তার। ঘরের বিষন্ন নীরবতা বড় পীড়া দেয় তাকে। সেটা ভঙ্গ করেন প্রফেসর--তবে আমার ছোট আরেকটা কাজ আছে। সে কাজে আমি আপনাকে সাথে রাখতে চাই। এর কারন আছে অবশ্য। পরে বুঝতে পারবেন। চলুন আমার সাথে। মন্ত্রমুগ্ধের মতো উঠে দাড়ায় অমিতা। ভারী কাঠের দরজা খুলে পাশের ঘরে প্রবেশ করেন প্রফেসর। সাথে অমিতা। ঘরটা মিউজিয়মের মতো। একটি স্টীলের ভারী বক্স খুলে অমিতাকে দেখালেন সারসার ঘড়ির মতো টাইম মেশিন সাজানে। ৫ টা আছে। সাথে ম্যানুয়াল কিভাবে কাজ করবে। দুটো নিয়ে একটা অমিতাকে পড়িয়ে দিলেন আরেকটা নিজে পড়লেন।দুই জনের মেশিনেই সময় সেট করলেন ২৩শে জুন ১৯৮০, বিকাল ৫টা। সাথে অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশও সেট করে দিলেন।পূর্ব সময় ২২৩ জুন ১৯৮০। বিকাল ৫টা।গ্রামের একটি বাড়ীর সামনের এক ভিটায় নিজেদের ফিরে পেলেন প্রফেসর ও অমিতা। অব্যবহৃত ভিটায় বেশ কিছু ঝোপ-জঙ্গল । চারিদিক নিস্তব্ধ। কোন এক ভয়ংকর ঘটনার বয়ে প্রকৃতি যেন নীরব হয়ে পড়েছে। ৩০ বছর আগে দেখা বাড়ীর প্রতিটি দৃশ্য তার মনে পড়ে গেলো মুহুর্তের মধ্যেই। কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছিলো না অমিতা। প্রফেসরের চোখের কোনে কি চিকচিকে পানি দেখা যাচ্ছে! হাত টেনে অমিতাকে নিয়ে এক ঝোপে সেধিয়ে গেলেন তিনি। নজর রাখলেন বাড়ীর সামনের বড় ঘরটার দরজার দিকে। একটু পড় কার যেন হালকা পদশব্দ পাওয়া গেল। সাদা চেকশার্ট ও ছাপার লুংগী পড়া কে ও ? ও পাড়ার সাদিদ না? ৩০ বছরের পুরানো সেই অচেনা শয়তানকে আজ চিনতে পারলেন প্রফেসর। চোঁখ ধকধক করে উঠলো তার। ঘরে ঢুকে গেছে সাদিদ। একটু পরে অমিতার হাত ধরে ঘরের দিকে হালকা পায়ে নিঃশব্দে দৌড় দিলেন তিনি। হাতে বেরিয়ে এসেছে অত্যাধুনিক মডেলের কোল্ট রিভলবার। থ্রিলের গন্ধ পেয়ে অভ্যাসবশতঃ অমিতার হাতেও চলে এলো তার নিজস্ব পিস্তল।ভিতরের ঘরে ঢুকে তারা দেখলো সেই লোকটা ধস্তাধস্তি করছে কিশোরী এক মেয়ের সাথে। মেয়েটার পুরো মুখ চাদর দিয়ে আটকানো। তাই সে কোন শব্দ করতে পারছে না। ধীরে ধরে পরাস্ত হয়ে যাচ্ছে মেয়েটা। সরাসরি পিস্তল তুললেন প্রফেসর। এখনি হয়তো গুলী করে দিবেন। তার হাত টেনে ধরলো অমিতা। এগিয়ে গিয়ে পিস্তলের এক বাড়িতে অজ্ঞান করে দিলো অচেনা লোকটাকে। অজ্ঞান দেহটাকে তুলে ধরে বাইরে নিয়ে গেলো ভিটার কাছে।প্রফেসর এগিয়ে গিয়ে মুখের চাদর সরিয়ে দিলেন কিশোরী মেয়েটির। হাতের বাধনও খুলে দিলেন। ভয়ার্ত দৃষ্টিতে সে তাকালো প্রফেসরের দিকে। -আর কোন ভয় নেই তোমার। নিজেকেই নিজে শোনাচ্ছেন যেন প্রফেসর। শয়তানটার উপযুক্ত ব্যবস্থা করেছি। সামনে আর কখনোই কোন ভয় তাড়া করে ফিরতে পারবে না তোমাকে। মেয়েটার মনের ভয়ংকর অনূভুতির পুরোটাই অনুভব করতে পারছেন তিনি। ৩০ বছর পরে হলেও ভয়ংকর প্রতিটা মূহুর্ত এখনো জ্যান্ত হয়ে তাড়া করে বেড়ায় তাকে। পরম মমতায় তিনি জড়িয়ে ধরলেন আপনাকে যদি একটু ভয়ও দুর করা যায় কোমল স্পর্শে!হিসাব মতো ঠিক ৩০ মিনিট পরে ভাইয়ের বাড়ী থেকে ফিরে এলো কিশোরীর মা। আবার কান্নায় বাকরুদ্ধ হয়ে গেলেন প্রফেসর। কতদিন পর! কেমন আছো মা? কিন্তু প্রশ্নটা মনেই থেকে গেলো। অমিতা চলে এসেছে। দুজনে মিলে বুঝালেন কিশোরীর মাকে কি ঘটতে চলেছিলো। এর মধ্যে আরও লোকজন চলে এসেছে। দুরপথে যাচ্ছে তাই বিদায় নিয়ে নিলো প্রফেসর ও অমিতা। সময় ঠিক করে নিজস্ব সময়ে চলে এলেন তারা।নতুন সময়প্রফেসরের বাড়ীর সেই মিউজিয়ামে নিজেকে আবিষ্কার করলেন অমিতা। কিন্তু প্রফেসর কোথায়? ঘরের আর জিনিস পত্রই বা কোথায়?ঘর থেকে বের হয়ে আরও অবাক হলো। প্রফেসরের স্টাডি রুমটার সবকিছুই কেমন যেন অচেনা মনে হচ্ছে। বাইরে চলে এলো সে। বাড়ির সামনে ছোট্ট একটা বাগান। সেখানে চেয়ারে এক বয়স্ক মহিলা বসে আছে। চোঁখে ভারী কাঁচের চশমা। সামনে আরেকজন কমবয়সী মেয়ে বসা কোলে বাচ্চা সহ। এগিয়ে গেলো অমিতা। প্রফেসরকে চিনতে পারলো। কিন্তু প্রফেসর তাকে চিনছে বলে মনে হলো না।দুই জনেই প্রশ্নবোধক দৃষ্টি নিয়ে তাকালো অমিতার দিকে। অমিতা ভেবে পেলো না সে কি বলবে। তাই প্রথমেই নিজের পরিচয় দিলো ইন্সপেক্টর অমিতা, সিআইডি বলে। আইডি কার্ডও দেখালো। এ সব ক্ষেত্রে পুলিশের পরিচয় টনিকের কাজ দেয়। -আপনি আমাকে চিনতে পারছেন না প্রফেসর?-কে প্রফেসর! অবাক হলো বয়স্ক মহিলা। আমি তো প্রিন্সিপাল রাশিদা রাহাত সীমা। নতুন বাংলা কলেজের চলতি দায়িত্বে আছি। আমি কি আপনাকে চিনি? নাকি কোন কাজে এসেছেন। আপনাকে কেন যেন চেনা চেনা মনে হচ্ছে!প্রিন্সিপাল রাশিদা ভারী চশমার আড়াল থেকে অমিতার চেহারাটা ভালো করে দেখার চেষ্টা করে যায়। তার মনে হতে থাকে অনেক অনেক বছর আগে দেখা কারও সাথে এই মহিলার চেহারার কেমন যেন একটা অদ্ভুত মিল আছে! অবাক হয়ে ভাবতে থাকে সে ...তাও কি সম্ভব!
4 comments for "(বিজ্ঞান গল্প) অন্য সময় কল্প"
See more stories
How nice article ! thanks
Good