(ভূতের গল্প) একটা ভয়ংকর ভুতের গল্প।

7 Comments
সোরাব ভাই ? সোরাব ভাই ? মতির ডাকে ঘুম ভাঙল সোহরাবের । অল্প ঘুমের মানুষ সে। এক ডাকেই জেগে উঠলো। কিন্তু বিছানা ছাড়ল না। শরীরটা আর আগের মত নেই ।
-সোরাব ভাই ? ও সোরাব ভাই ?
পুরোপুরি ঘুম ভেঙে গেছে সোহরাবের । জোয়ান বয়সের মত এখন আর লাফ দিয়ে উঠে বসতে পারে না । সময় লাগে । বয়সকালে ঘোড়ার মত তেজি ছিল সে । কাঠের চৌকিতে মট মট শব্দ করে উঠে বসে সোহরাব ।
-খাড়া মতি , আইতাছি । জগ থেকে এক গ্লাস পানি খায় সে ।
আজকে উত্তরের বিলে যাওয়ার কথা মতির সাথে। জাল বাছতে হবে । মানুষে কারেন্ট জাল পাতে ওদিকে । অনেক মাছ আটকা পরে । নিজেদের জালের মাছ ছাড়াও অন্যদেরও জাল বাছে ওরা । তাই এই ভোর রাতে যাওয়া । বারতি সাবধানতা । ভোরের আলো ফোটার আগে মাছগুলো তাজা তাজা হাটে নিতে হবে । তাজা মাছের দাম ভালো । সকাল বেলা ভালো দাম মেলে ।
-কত বেলা হল ?
ভাবে সোহরাব । চোখে এখনো ঘুম ঘুম । ফযরের
বেলাতেও তার ঘুম পায় ? ভেবে অবাক হয় সে ।
হায়রে বয়স !
- সোরাব ভাই ? ও সোরাব ভাই ? - আইতাছি কইলাম না ! খাড়া !

Visit our new blog - Bangla Hub

মতি থেমে যায় । নতুন বিয়ে করেছে সে । অল্প বয়স – উত্তেজনা বেশি । এক সময় এ দিন তারও ছিল । দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে সোহরাব । হাতে একটা বেতের ঝুড়ি আর মাছ মারার আট ফলার ট্যাঁটা নিয়ে কবাট খুলে বেরিয়ে এল সোহরাব । বাইরে অন্ধকার । কিন্তু পথ চলা যায় । এইবার কিছু টাকা পয়সা জমিয়ে একটা টর্চ লাইট কিনতে হবে । না হয় কোনদিন আবার সাপখোপে কামড়িয়ে বসে !
- বউডা ভালো নি তর , মতি ? আস্তে গলায় জানতে চায় সোহরাব ।
-হ । ফিসফিসিয়ে জবাব দিল মতি । পাছে কেউ শুনে ফেলে !
আশেপাশে ঘর বাড়ি আছে । মাঝে মাঝে বাঁশঝাড় । এবড়ো থেবড়ো মাটির রাস্তা । উষ্টা খেল সোহরাব । খিস্তি করল সে । মতি হাঁটছে সাচ্ছন্দে । যেন উড়ে উড়ে যাচ্ছে । হায়রে বয়সকাল ! ভাবে সোহরাব । হঠাৎই এক বাড়ির আড়াল থেকে বেরিয়ে এল একটি কালো ছায়া । চারপায়ে হাঁটছে। দাড়িয়ে পড়েছে মতি । সোহরাবের সামনে । দাড়িয়ে পড়েছে সোহরাবও । অন্ধকারে চোখ জ্বলছে সে কালো ছায়ার । ওরা এক চুলও নড়ছে না । নিঃশ্বাস বন্ধ করে দাড়িয়ে আছে । আরও কিছুটা এগিয়ে আসে ছায়াটি । হাফ ছাড়ে সোহরাব । একটা কুকুর ! হাড় জিরজিরে । ওদের থেকে হাত দশেক দূরে দাড়িয়ে পড়লো কুকুরটি । ডাকছে না । শুধু মুখ দিয়ে ঘড়ঘড় শব্দ বের হচ্ছে । গায়ে রোম ওঠা শব্দ । হঠাৎই যেভাবে এসেছিলো , সে ভাবেই পিছিয়ে গেলো । মিলিয়ে গেল বাড়ির ভিটার আড়ালে । ওরা হাটতে শুরু করল আবার । এবার আর কথা বলল না সোহরাব । বাড়তি সাবধানতা । কেউ চিনে ফেললে সমস্যা । কুকুরটি ঘেউ ঘেউ করলে বিপদ ছিল । করল না কেন ? সোহরাব বুঝে উঠছে না ! ভাবল হয় রোগে ধরেছে , না হয় তার মতই বুড়িয়ে যাচ্ছে । হাটতে হাটতে গ্রামের শেষ মাথায় চলে এল ওরা । সামনে একটা খাল । তার উপরে ব্রিজ । মান্ধাতা আমলের লোহার ব্রিজ । কাঠের পাটাতন । ক্ষয়ে গেছে জায়গায় জায়গায় । ব্রিজের ওপারে একসারি তালগাছ । একটা পুরান ভিটাও আছে । কেউ থাকে না । তার মাঝ দিয়ে সরু মাটির রাস্তা । দু’ধারে আগাছা ঘাসে ভরা । বৃষ্টি হয়েছিল হয়ত । রাস্তা কাদা প্যাচপ্যাচে হয়ে আছে । এই রাস্তা নিয়ে গ্রামে অনেক গল্প আছে । অশুভ সব গল্প । এইখানে নাকি উনারা থাকেন। নাম নিতে হয় না । উনাদের পথে পরলে নাকি খারাপ কিছু হয় । এরকম অনেক হয়েছে । একবার একজনকে পেয়েছিল গ্রামবাসী । মরা । কিন্তু তার মাথা থেকে কোমর অবধি ছিল মাটির নিচে গাথা । শুধু পা দুইটা উপরে । আর একবার পেয়েছিল একজনের গাই গরু । শুধু চার পা মাটির উপরে । গা শিরশির করা গল্প এগুলো । কিন্তু গল্প । হাসে সোহরাব । কত এলো গেলো এই রাস্তায় ! আর সোহরাব এমন কাউকেই দেখে নাই যে নিজের চোখে ঘটনাগুলো দেখেছে । সবই শোনা গল্প। অনেকদূর এগিয়ে গেছে মতি । চিন্তা করতে করতে খেয়ালই করে নি সে ।
- ঐ । খাড়া – আস্তে হাট ব্যাটা !
মতি দাড়ায় না । তালগাছ গুলর মাঝ দিয়ে সরসর করে হাটতে থাকে । দৌড়াচ্ছে যেন । সোহরাব ভড়কে যায় । মতির পায়ের দিকে তাকায় সে । গোল বাঁশের মত সে পা । কোন আঙ্গুল নেই ! পায়ের পাতা বলে কিছু নেই ! সোহরাব গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে উঠে
– খাড়া কইছি – ট্যাঁটা মারুম কইলাম ! দাড়িয়ে পরল মতি ।
ধীরে ধীরে ঘুরে দাড়ায় সে । শরীর কেপে উঠলো সোহরাবের । জ্ঞান হারাল না সে । বড় সাহসী মানুষ। ছুড়ে মারল হাতের ট্যাঁটা । এ আর যাই হোক – মতিনয় । বাতাস খান খান করে হেসে উঠলো মতি । ——♪
————————♪————————♪——————♪—
- সোরাব ভাই ? সোরাব ভাই ? পুবের আকাশে আলো ।
- সোরাব ভাই ? ও সোরাব ভাই ? - তোমার ভাই না একটু আগেই বাইরে গেলো তোমার লগে !
- কন কি ? আমি তো আইলাম মাত্রই । দরজা খুলে বেরিয়ে এল সোহরাবের স্ত্রী । মোমেনা । চোখে মুখে প্রশ্ন নিয়ে তাকিয়ে আছে মতির দিকে । ——————♪———————♪————————
সোহরাব কে পাওয়া গিয়েছিল । পুরাতন লোহার ব্রিজের সেই খানে । তালগাছগুলোর কাছে । খালের পাড়ে । মরা । মাথা থেকে কোমর অবধি খালের পাড়ে কাদায় গাথা । শুধু পা দুইটা বেরিয়ে ছিল । ——————♪————————♪—————
♪———
-মতি ভাই ? মতি ভাই ?
মতির টিনের ঘর । শীতের দিন। গলা পর্যন্ত দুইটা মোটা কাথা আর লেপ টেনে শুয়ে আছে । চোখে ঘুম নেই । গত কয়েক রাত ধরেই এমন হচ্ছে। পাশে তার ঘুমান দেড় বছরের ছেলে – আজিজুল , আর তার বউ । ♪রাতে ঘুমাতে পারে না মতি ।
-মতি ভাই ? মতি ভাই ? মতির মাথার কাছ থেকে আধ হাত দূরে টিনের বেড়া । তার ঠিক ওপাশে দাড়িয়েই যেন ডাকছে তাঁকে । মাঘ মাসের শীতেও ঘেমে গেছে মতি । ঘাড় ঘুরিয়ে বউ – বাচ্চার দিকে তাকাল মতি । না , ওরা কিছু শুনতে পায় নি । পা টেনে লেপের নিচে গুটিয়ে আনে মতি। মুখ পর্যন্ত টেনে দেয় লেপ । আজিজুলকে জড়িয়ে ধরে সে । তার মাথার কাছের টিনের বেড়ায় খচখচ শব্দ *। আবার ডেকে উঠে
– মতি ভাই ? ও মতি ভাই ? কয়েক রাত ধরে তিনবার ডেকেই চলে যায় সে।
মতি সাড়া দেয় না ।
7 comments for "(ভূতের গল্প) একটা ভয়ংকর ভুতের গল্প।"