ভৌতিক বাড়ি: এক রাতের অভিশাপ

Be the first to comment!

সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। নীলয় তার বন্ধুরা—রানা, তমাল আর শ্রেয়ার সঙ্গে গ্রামের এক পুরনো বাড়ির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই বাড়িটিকে সবাই “জমিদার বাড়ি” নামে চেনে। বহু বছর আগে এই বাড়িতে নাকি এক জমিদার তার পুরো পরিবারসহ রহস্যজনকভাবে খুন হন। তখন থেকেই বাড়িটা পরিত্যক্ত। গ্রামবাসীরা বলে, রাত হলে সেই বাড়ি থেকে কান্নার আওয়াজ, শেকলের ঝনঝনানি শোনা যায়।

কিন্তু নীলয় এসব ভূতের গল্পে বিশ্বাস করে না। বরং ও চ্যালেঞ্জ নিয়েছে এক রাত ওই বাড়িতে কাটিয়ে প্রমাণ করবে—ভূত-টুত কিছুই নেই।



চারজন মিলে রাত ৯টার দিকে বাড়ির ভেতরে ঢোকে। পুরনো কাঠের দরজাটা চাপা শব্দে বন্ধ হয়, যেন কারও দীর্ঘশ্বাসের মতো। ভেতরে ধুলা, জাল, আর একটা ঘন গন্ধ। ওরা একটা মাঝারি ঘরে শুয়ে পড়ে, সঙ্গে ছিল টর্চ আর ক্যাম্পিং বেড। কথা বলতে বলতে হঠাৎ করেই বাইরে ঝড় ওঠে, হাওয়ার তাণ্ডবে জানালার কাঁচ কাঁপতে থাকে।

রাত ১২টার একটু পরে শ্রেয়া আচমকা উঠে চিৎকার করে ওঠে—
“কে… কে দাঁড়িয়ে ছিল জানালার পাশে? কেউ একজন তাকাচ্ছিল…”

রানা টর্চ জ্বালিয়ে দেখে, বাইরে কেউ নেই। কিন্তু জানালার কাঁচে একটা হাতের ছাপ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। সবার চোখ বড় হয়ে যায়। তখনই দূরের ঘর থেকে ভেসে আসে শেকলের টানাটানি আর এক নারীর করুণ কণ্ঠে কান্না।

তমাল বলল, “চলো বেরিয়ে যাই। এটা স্বাভাবিক না।”
কিন্তু দরজাটা ভিতর থেকে বন্ধ—হাতল নড়ছেই না। যেন কেউ বা কিছু বাইরে থেকে আটকে রেখেছে।

ঘরের ভেতর হঠাৎ ঠাণ্ডা হয়ে আসে, নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। হাওয়ার সঙ্গে ভেসে আসে একটি অস্পষ্ট কণ্ঠ—
“আমার ন্যায়… কেউ পায়নি… তোমরাও পাবে না…”

নীলয়, এবার সত্যিই ভয় পেয়ে যায়। অতীতের সব অবিশ্বাস ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। হঠাৎ, শ্রেয়া মাটিতে লুটিয়ে পড়ে—তার চোখ ফাঁকা, মুখে নীলচে ছায়া। সে যেন আর নিজে নেই—ভেতরে কেউ ঢুকে পড়েছে।

শ্রেয়ার মুখ দিয়ে বেরোয় সেই একই কণ্ঠ—
“এই বাড়ি আমার… তোমরা কেন এসেছ?”

তিন বন্ধু আতঙ্কে চিৎকার করতে করতে দোতলার দিকে ছুটে যায়। ওখানে একটা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এক সাদা শাড়ি পরা ছায়ামূর্তি দেখে সবাই থমকে যায়। সে ধীরে ধীরে বলে,
“আমি মুক্তি চাই… কেউ আমাকে খুন করেছিল… সেই রাতেই…”

হঠাৎই পুরো বাড়ি কেঁপে ওঠে। দরজাগুলো খুলে যায়, বাতাস থেমে যায়। শ্রেয়া ধীরে ধীরে উঠে বসে—সে কিছুই মনে করতে পারে না।

ওরা দৌড়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে। সকাল হলে স্থানীয় একজন বয়স্ক মানুষ জানান, জমিদার স্ত্রীকেই খুন করা হয়েছিল এক ঈর্ষাকাতর আত্মীয়ের হাতে, আর তখন থেকেই তার আত্মা ন্যায়ের খোঁজে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

নীলয় আর কখনো অবিশ্বাস করে না—কারণ সে জানে, কিছু ব্যথা কখনো মরে না… তারা শুধু অপেক্ষা করে… পরের কারও জন্য।

0 comments for "ভৌতিক বাড়ি: এক রাতের অভিশাপ"