Latest Post

(ভূতের গল্প) একটা ভয়ংকর ভুতের গল্প।

7 Comments
সোরাব ভাই ? সোরাব ভাই ? মতির ডাকে ঘুম ভাঙল সোহরাবের । অল্প ঘুমের মানুষ সে। এক ডাকেই জেগে উঠলো। কিন্তু বিছানা ছাড়ল না। শরীরটা আর আগের মত নেই ।
-সোরাব ভাই ? ও সোরাব ভাই ?
পুরোপুরি ঘুম ভেঙে গেছে সোহরাবের । জোয়ান বয়সের মত এখন আর লাফ দিয়ে উঠে বসতে পারে না । সময় লাগে । বয়সকালে ঘোড়ার মত তেজি ছিল সে । কাঠের চৌকিতে মট মট শব্দ করে উঠে বসে সোহরাব ।
-খাড়া মতি , আইতাছি । জগ থেকে এক গ্লাস পানি খায় সে ।
আজকে উত্তরের বিলে যাওয়ার কথা মতির সাথে। জাল বাছতে হবে । মানুষে কারেন্ট জাল পাতে ওদিকে । অনেক মাছ আটকা পরে । নিজেদের জালের মাছ ছাড়াও অন্যদেরও জাল বাছে ওরা । তাই এই ভোর রাতে যাওয়া । বারতি সাবধানতা । ভোরের আলো ফোটার আগে মাছগুলো তাজা তাজা হাটে নিতে হবে । তাজা মাছের দাম ভালো । সকাল বেলা ভালো দাম মেলে ।
-কত বেলা হল ?
ভাবে সোহরাব । চোখে এখনো ঘুম ঘুম । ফযরের
বেলাতেও তার ঘুম পায় ? ভেবে অবাক হয় সে ।
হায়রে বয়স !
- সোরাব ভাই ? ও সোরাব ভাই ? - আইতাছি কইলাম না ! খাড়া !

Visit our new blog - Bangla Hub

মতি থেমে যায় । নতুন বিয়ে করেছে সে । অল্প বয়স – উত্তেজনা বেশি । এক সময় এ দিন তারও ছিল । দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে সোহরাব । হাতে একটা বেতের ঝুড়ি আর মাছ মারার আট ফলার ট্যাঁটা নিয়ে কবাট খুলে বেরিয়ে এল সোহরাব । বাইরে অন্ধকার । কিন্তু পথ চলা যায় । এইবার কিছু টাকা পয়সা জমিয়ে একটা টর্চ লাইট কিনতে হবে । না হয় কোনদিন আবার সাপখোপে কামড়িয়ে বসে !
- বউডা ভালো নি তর , মতি ? আস্তে গলায় জানতে চায় সোহরাব ।
-হ । ফিসফিসিয়ে জবাব দিল মতি । পাছে কেউ শুনে ফেলে !
আশেপাশে ঘর বাড়ি আছে । মাঝে মাঝে বাঁশঝাড় । এবড়ো থেবড়ো মাটির রাস্তা । উষ্টা খেল সোহরাব । খিস্তি করল সে । মতি হাঁটছে সাচ্ছন্দে । যেন উড়ে উড়ে যাচ্ছে । হায়রে বয়সকাল ! ভাবে সোহরাব । হঠাৎই এক বাড়ির আড়াল থেকে বেরিয়ে এল একটি কালো ছায়া । চারপায়ে হাঁটছে। দাড়িয়ে পড়েছে মতি । সোহরাবের সামনে । দাড়িয়ে পড়েছে সোহরাবও । অন্ধকারে চোখ জ্বলছে সে কালো ছায়ার । ওরা এক চুলও নড়ছে না । নিঃশ্বাস বন্ধ করে দাড়িয়ে আছে । আরও কিছুটা এগিয়ে আসে ছায়াটি । হাফ ছাড়ে সোহরাব । একটা কুকুর ! হাড় জিরজিরে । ওদের থেকে হাত দশেক দূরে দাড়িয়ে পড়লো কুকুরটি । ডাকছে না । শুধু মুখ দিয়ে ঘড়ঘড় শব্দ বের হচ্ছে । গায়ে রোম ওঠা শব্দ । হঠাৎই যেভাবে এসেছিলো , সে ভাবেই পিছিয়ে গেলো । মিলিয়ে গেল বাড়ির ভিটার আড়ালে । ওরা হাটতে শুরু করল আবার । এবার আর কথা বলল না সোহরাব । বাড়তি সাবধানতা । কেউ চিনে ফেললে সমস্যা । কুকুরটি ঘেউ ঘেউ করলে বিপদ ছিল । করল না কেন ? সোহরাব বুঝে উঠছে না ! ভাবল হয় রোগে ধরেছে , না হয় তার মতই বুড়িয়ে যাচ্ছে । হাটতে হাটতে গ্রামের শেষ মাথায় চলে এল ওরা । সামনে একটা খাল । তার উপরে ব্রিজ । মান্ধাতা আমলের লোহার ব্রিজ । কাঠের পাটাতন । ক্ষয়ে গেছে জায়গায় জায়গায় । ব্রিজের ওপারে একসারি তালগাছ । একটা পুরান ভিটাও আছে । কেউ থাকে না । তার মাঝ দিয়ে সরু মাটির রাস্তা । দু’ধারে আগাছা ঘাসে ভরা । বৃষ্টি হয়েছিল হয়ত । রাস্তা কাদা প্যাচপ্যাচে হয়ে আছে । এই রাস্তা নিয়ে গ্রামে অনেক গল্প আছে । অশুভ সব গল্প । এইখানে নাকি উনারা থাকেন। নাম নিতে হয় না । উনাদের পথে পরলে নাকি খারাপ কিছু হয় । এরকম অনেক হয়েছে । একবার একজনকে পেয়েছিল গ্রামবাসী । মরা । কিন্তু তার মাথা থেকে কোমর অবধি ছিল মাটির নিচে গাথা । শুধু পা দুইটা উপরে । আর একবার পেয়েছিল একজনের গাই গরু । শুধু চার পা মাটির উপরে । গা শিরশির করা গল্প এগুলো । কিন্তু গল্প । হাসে সোহরাব । কত এলো গেলো এই রাস্তায় ! আর সোহরাব এমন কাউকেই দেখে নাই যে নিজের চোখে ঘটনাগুলো দেখেছে । সবই শোনা গল্প। অনেকদূর এগিয়ে গেছে মতি । চিন্তা করতে করতে খেয়ালই করে নি সে ।
- ঐ । খাড়া – আস্তে হাট ব্যাটা !
মতি দাড়ায় না । তালগাছ গুলর মাঝ দিয়ে সরসর করে হাটতে থাকে । দৌড়াচ্ছে যেন । সোহরাব ভড়কে যায় । মতির পায়ের দিকে তাকায় সে । গোল বাঁশের মত সে পা । কোন আঙ্গুল নেই ! পায়ের পাতা বলে কিছু নেই ! সোহরাব গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে উঠে
– খাড়া কইছি – ট্যাঁটা মারুম কইলাম ! দাড়িয়ে পরল মতি ।
ধীরে ধীরে ঘুরে দাড়ায় সে । শরীর কেপে উঠলো সোহরাবের । জ্ঞান হারাল না সে । বড় সাহসী মানুষ। ছুড়ে মারল হাতের ট্যাঁটা । এ আর যাই হোক – মতিনয় । বাতাস খান খান করে হেসে উঠলো মতি । ——♪
————————♪————————♪——————♪—
- সোরাব ভাই ? সোরাব ভাই ? পুবের আকাশে আলো ।
- সোরাব ভাই ? ও সোরাব ভাই ? - তোমার ভাই না একটু আগেই বাইরে গেলো তোমার লগে !
- কন কি ? আমি তো আইলাম মাত্রই । দরজা খুলে বেরিয়ে এল সোহরাবের স্ত্রী । মোমেনা । চোখে মুখে প্রশ্ন নিয়ে তাকিয়ে আছে মতির দিকে । ——————♪———————♪————————
সোহরাব কে পাওয়া গিয়েছিল । পুরাতন লোহার ব্রিজের সেই খানে । তালগাছগুলোর কাছে । খালের পাড়ে । মরা । মাথা থেকে কোমর অবধি খালের পাড়ে কাদায় গাথা । শুধু পা দুইটা বেরিয়ে ছিল । ——————♪————————♪—————
♪———
-মতি ভাই ? মতি ভাই ?
মতির টিনের ঘর । শীতের দিন। গলা পর্যন্ত দুইটা মোটা কাথা আর লেপ টেনে শুয়ে আছে । চোখে ঘুম নেই । গত কয়েক রাত ধরেই এমন হচ্ছে। পাশে তার ঘুমান দেড় বছরের ছেলে – আজিজুল , আর তার বউ । ♪রাতে ঘুমাতে পারে না মতি ।
-মতি ভাই ? মতি ভাই ? মতির মাথার কাছ থেকে আধ হাত দূরে টিনের বেড়া । তার ঠিক ওপাশে দাড়িয়েই যেন ডাকছে তাঁকে । মাঘ মাসের শীতেও ঘেমে গেছে মতি । ঘাড় ঘুরিয়ে বউ – বাচ্চার দিকে তাকাল মতি । না , ওরা কিছু শুনতে পায় নি । পা টেনে লেপের নিচে গুটিয়ে আনে মতি। মুখ পর্যন্ত টেনে দেয় লেপ । আজিজুলকে জড়িয়ে ধরে সে । তার মাথার কাছের টিনের বেড়ায় খচখচ শব্দ *। আবার ডেকে উঠে
– মতি ভাই ? ও মতি ভাই ? কয়েক রাত ধরে তিনবার ডেকেই চলে যায় সে।
মতি সাড়া দেয় না ।
Read More

(ভুতের গল্প) চুড়ান্ত ভয়াবহতা...

4 Comments

এবার যে গল্পটি বলতে যাচ্ছি তা আমার বন্ধু প্রিন্সের মুখ থেকে শোনা । ও এই গল্পটি ওর মামার কাছ থাকে শুনেছিল । এই গল্পটি যখনি মনে হয় তখনি আমার সারা শরীর ভয়ে কেঁপে উঠে । এই ঘটনাটি ঘটে নওগাঁ শহরের একটি রাস্তায় । তখন রাত প্রায় ২ টা বাজে । এই ঘটনাটির স্বীকার একজন সিএনজি চালক। তার নাম হাবিব। হাবিব তখন তার সিএনজি নিয়ে বাসায় ফিরছিল । সে হঠাৎ দেখলো দুইজন মধ্যবয়সী হুজুর ধরনের ব্যক্তি তাকে সিএনজি থামানোর জন্য অনুরোধ করছে । তা দেখে সে থামল এবং একজন হুজুর তার সাথে কথা বললো ।

হুজুরঃ ভাই আমরা খুব বিপদে পড়েছি ।
হাবিবঃ আপনাদের কি হয়েছে জানতে পারি ?
হুজুরঃ সামনে আমাদের এক বন্ধু একটি লাশ নিয়ে দাড়িয়ে আছে । ওই লাশটাকে নিয়ে আমাদের সামনের গ্রামে যেতে হবে। তুমি কি আমাদের পৌঁছে দিতে পারবে? হাবিব কিছুক্ষণ ভাবলো। তার মাঝে উনাদের জন্য দয়া হলো । সে আবার কথা বললো।

হাবিবঃ আমি আপনাদের পৌঁছে দিব ।
হুজুরঃ ধন্যবাদ তোমাকে ।

এটা বলে দুইজন সিএনজ়িতে উঠে পড়লো। কিছু দূরে যেতেই হাবিব দেখলো আরেকজন হুজুর লাশ নিয়ে দাড়িয়ে আছে । লাশটি কাপড় দিয়ে প্যাচানো । হাবিব উনার সামনে এসে সিএনজ়ি থামালো । পএরপর দুই হুজুর নামলো এবং তিন হুজুর লাশটি নিয়ে উঠলো। তারপর তারা হাবিবকে সিএনজ়ি চালাতে বললো । আর একজন হুজুর ওর সাথে কথা বলতে থাকলো।

হুজ়ুরঃ সামনের গ্রামে যেতে কতক্ষন লাগবে ?
হাবিবঃ প্রায় ৪০ মিনিট।
হুজুরঃ তুমি পেছনের দিকে চাইবে না । লাশের অবস্থা বেশি ভালো না । দেখলে ভয় পাবে ।
হাবিবঃ আচ্ছা হুজুর ।

তারপর হাবিব সিএনজি চালাতে শুরু করলো। কিন্তু সে লাশ দেখার আকর্ষণ অনুভব করলো কিন্তু সে সাহস পেলো না । এর ৫ থেকে ৬ মিনিট পর সে এক অদ্ভুত বাজে শব্দ শুনতে পারলো । এক অজানা ভয় তাকে গ্রাস করলো । সে তার মনের ভয় দূর করার জন্য সামনের লুকিং গ্লাস দিয়ে পেছনের দিকে চইলো । চেয়ে যা দেখতে পারলো যা সে কেনো, আমরা কেউ কোনোদিন ভাবতে পারি না। সে দেখলো ওই তিন হুজুর লাশটিকে ছিড়ে ছিড়ে শকুনের মত খাচ্ছে। কেউ কলিজা, তো কেউ বুকের রক্ত পান করছে। তা দেখে সে চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেল।

যখন তার জ্ঞান ফিরলো তখন সে হাসপাতালে ভর্তি। তার সারা শরীরে ব্যান্ডেজ । তাকে সকালে রাস্তার পাশে একটি খাল থেকে উদ্ধার করা হয় । এখন সে সুস্থ আছে । কিন্তু ওইদিনের ঘটনার পর থেকে আজও সে সন্ধ্যার পর আর সিএনজি নিয়ে বের হয় না । তাকে আজও ওইদিনের ঘটনা তাড়া দিয়ে বেড়ায়।

Read More

(ছোটদের গল্প) টুনটুনি ও রাজার গল্প

12 Comments

রাজার বাগানের কোণে টুনটুনির বাসা ছিল। রাজার সিন্দুকের টাকা রোদে শুকুতে দিয়েছিল, সন্ধ্যার সময় তার লোকেরা তার একটি টাকা ঘরে তুলতে ভুলে গেল।
টুনটুনি সেই চকচকে টাকাটি দেখতে পেয়ে তার বাসায় এনে রেখে দিলে, আর ভাবলে, ‘ঈস! আমি কত বড়লোক হয়ে গেছি। রাজার ঘরে যে ধন আছে, আমার ঘরে সে ধন আছে!’ তারপর থেকে সে খালি এই কথাই ভাবে, আর বলে-
রাজার ঘরে যে ধন আছে
টুনির ঘরেও সে ধন আছে!
রাজা তাঁর সভায় বসে সে কথা শুনতে পেয়ে জিগগেস করলেন, ‘হ্যাঁরে? পাখিটা কি বলছে রে?’
সকলে হাত জোড় করে বললে, ‘মহারাজ, পাখি বলছে, আপনার ঘরে যে ধন আছে, ওর ঘরেও নাকি সেই ধন আছে!’ শুনে রাজা খিলখিল করে হেসে বললেন, ‘দেখ তো ওর বাসায় কি আছে?’
তারা দেখে এসে বললে, ‘মহারাজ, বাসায় একটা টাকা আছে।’
শুনে রাজা বললেন, ‘সে তো আমারই টাকা, নিয়ে আয় সেটা।’
তখুনি লোক গিয়ে টুনটুনির বাসা থেকে টাকাটি নিয়ে এল। সে বেচারা আর কি করে, সে মনের দুঃখে বলতে লাগল-
‘রাজা বড় ধনে কাতর
টুনির ধন নিলে বাড়ির ভিতর!’
শুনে রাজা আবার হেসে বললেন, ‘পাখিটা তো বড় ঠ্যাঁটা রে! যা ওর টাকা ফিরিয়ে দিয়ে আয়।’
টাকা ফিরে পেয়ে টুনির বড় আনন্দ হয়েছে। তখন সে বলছে-
‘রাজা ভারি ভয় পেল
টুনির টাকা ফিরিয়ে দিল।’
রাজা জিগগেস করলেন, ‘আবার কি বলছে রে?’
সভার লোকেরা বললে, ‘বলছে যে মহারাজ নাকি বড্ড ভয় পেয়েছেন, তাই ওর টাকা ফিরিয়ে দিয়েছেন।’
শুনে তো রাজামশাই রেগে একেবারে অস্থির! বললেন, ‘কি, এত বড় কথা! আন তো ধরে, বেটাকে ভেজে খাই!’
যেই বলা, অমনি লোক গিয়ে টুনটুনি বেচারাকে ধরে আনলে। রাজা তাকে মুঠোয় করে নিয়ে বাড়ির ভিতর গিয়ে রানীদের বললেন, ‘এই পাখিটাকে ভেজে আজ আমাকে খেতে হবে!’
বলে তো রাজা চলে এসেছেন, আর রানীরা সাতজনে মিলে সেই পাখিটাকে দেখছেন।
একজন বললেন, ‘কি সুন্দর পাখি! আমার হাতে দাও তো একবার দেখি।’ বলে তিনি তাকে হাতে নিলেন। তা দেখে আবার একজন দেখতে চাইলেন। তাঁর হাত থেকে যখন আর-একজন নিতে গেলেন, তখন টুনটুনি ফসকে গিয়ে উড়ে পালাল।
কি সর্বনাশ! এখন উপায় কি হবে? রাজা জানতে পারলে তো রা থাকবে না।
এমনি করে তাঁরা দুঃখ করছেন, এমন সময় ব্যাঙ সেইখান দিয়ে থপ-থপ করে যাচ্ছে।
সাত রানী তাকে দেখতে পেয়ে খপ করে ধরে ফেললেন, আর বললেন, ‘চুপ চুপ! কেউ যেন জানতে না পারে। এইটেকে ভেজে দি, আর রাজামশাই খেয়ে ভাববেন টুনটুনিই খেয়েছেন!’
সেই ব্যাঙটার ছাল ছাড়িয়ে তাকে ভেজে রাজামশাইকে দিলে তিনি খেয়ে খুশি হলেন। তারপর সবে তিনি সভায় গিয়ে বসেছেন, আর ভাবছেন, ‘এবারে পাখির বাছাকে জব্দ করেছি।’
অমনি টুনি বলছে-
‘বড় মজা, বড় মজা,
রাজা খেলেন ব্যাঙ ভাজা!’
শুনেই তো রাজামশাই লাফিয়ে উঠেছেন। তখন তিনি থুতু ফেলেন, ওয়াক তোলেন, মুখ ধোন, আরো কত কি করেন। তারপর রেগে বললেন, ‘সাত রানীর নাক কেটে ফেল।’
অমনি জল্লাদ গিয়ে সাত রানীক নাক কেটে ফেললে।
তা দেখে টুনটুনি বললে-
‘এই টুনিতে টুনটুনাল
সাত রানীর নাক কাটাল!’
তখন রাজা বললেন, ‘আন বেটাকে ধরে! এবার গিলে খাব! দেখি কেমন করে পালায়!’
টুনটুনিকে ধরে আনলে।
রাজা বললেন, ‘আন জল!’
জল এল। রাজা মুখ ভরে জল নিয়ে টুনটুনিকে মুখে পুরেই চোখ বুজে ঢক করে গিলে ফেললেন।
সবাই বললে, ‘এবারে পাখি জব্দ!’
বলতে বলতেই রাজামশাই ভোক্‌ করে মস্ত একটা ঢেকুর তুললেন।
সভার লোক চমকে উঠল, আর টুনটুনি সেই ঢেকুরের সঙ্গে বেরিয়ে এসে উড়ে পালালো।
রাজা বললেন, ‘গেল, গেল! ধর্‌ ধর্‌!’ অমনি দুশো লোক ছুটে গিয়ে আবার বেচারাকে ধরে আনলো।
তারপর আবার জল নিয়ে এল, আর সিপাই এসে তলোয়ার নিয়ে রাজা মশায়ের কাছে দাঁড়াল, টুনটুনি বেরুলেই তাকে দু টুকরো করে ফেলবে।
এবার টুনটুনিকে গিলেই রাজামশাই দুই হাতে মুখ চেপে বসে থাকলেন, যাতে টুনটুনি আর বেরুতে না পারে। সে বেচারা পেটের ভিতরে গিয়ে ভয়ানক ছটফট করতে লাগল!
খানিক বাদে রাজামশাই নাক সিঁটকিয়ে বললেন, ‘ওয়াক্‌।’ অমনি টুনটুনিকে সুদ্ধ তাঁর পেটের ভিতরের সকল জিনিস বেরিয়ে এল।
সবাই বললে, ‘সিপাই, সিপাই! মারো, মারো! পালালো!’
সিপাই তাতে থতমত খেয়ে তলোয়ার দিয়ে যেই টুনটুনিকে মারতে যাবে, অমনি সেই তলোয়ার টুনটুনির গায়ে না পড়ে, রাজামশায়ের নাকে পড়ল।
রাজামশাই তো ভয়ানক চ্যাঁচালেন, সঙ্গে-সঙ্গে সভার সকল লোক চ্যাঁচাতে লাগল। তখন ডাক্তার এসে ওধুধ দিয়ে পটি বেঁধে অনেক কষ্টে রাজামশাইকে বাঁচাল।
টুনটুনি তা দেখে বলতে লাগল-
‘নাক-কাটা রাজা রে।
দেখ তো কেমন সাজা রে!’
বলেই সে উড়ে সে-দেশ থেকে চলে গেল। রাজার লোক ছুটে এসে দেখল, খালি বাসা পড়ে আছে।

Read More

(রহস্য গল্প) কে বাঘ মারিলো

3 Comments
গ্রামে এক গোঁপেশ্বর বাবু। ইয়া লম্বা গোঁপজোড়া। মুখের দুই ধার হইতে দুইটি গোঁপের গুচ্ছ ২০-৩০ হাত ওপরে উঠিয়াছে। রোজ তেল আর আঠা লাগাইয়া গোঁপেশ্বর বাবু তার গোঁপজোড়াকে আরও শক্ত করিয়া রাখে। গ্রামের ছোটরা গোঁপেশ্বর বাবুর বড়ই ভক্ত।

Visit our new blog - Bangla Hub

ওই আগডালে পাকা আমটি রাঙা টুকটুক করিতেছে। ঢিল দিয়া কিছুতেই সেটি পাড়া যাইতেছে না।
গোঁপেশ্বর বাবু পথ দিয়া যাইতে ছেলেরা তাকে ধরিয়া বলিল, আমটি পাড়িয়া দাও। গোঁপেশ্বর বাবু তার গোঁপে একটু তা দিয়া গোঁপজোড়া আমের সঙ্গে আটকাইয়া মারিল এক টান। অমনি আমটি পড়িয়া গেল। ছেলেরা কলরব করিয়া কুড়াইয়া লইল। শুধু কি আম! ওই আগডালের পাকা কুল, জামগাছের জাম আর খেজুরগাছের কাঁদিভরা পাকা খেজুর! যখন দরকার গোঁপেশ্বর বাবুকে ডাকিয়া আনিলেই পাড়িয়া দেয়। সেই জন্য ছেলেদের দলে গোঁপেশ্বর বাবুকে লইয়া কাড়াকাড়ি। এর মধ্যে হইল কি? কোথা হইতে গ্রামে আসিল এক দাড়িওয়ালা মিঞা। ২০-৩০ হাত লম্বা দাড়ি। চলিতে মাটিতে পড়িয়া যায়। যে পথ দিয়া যায়, দাড়িতে পথের ধুলা-বালু ঝাঁটাইয়া লইয়া যায়। পাড়ার বউ-ঝিয়েরা তাকে বড়ই খাতির করে। দেখিলেই বলে, দাড়িওয়ালা মিঞা, আইস, আইস, পান খাইয়া যাও। দাড়িওয়ালা মিঞা বাড়িতে আসিলে বউদের আর উঠান ঝাঁট দিতে কষ্ট করিতে হয় না। উঠানের ওপর দিয়া ঘুরিয়া গেলেই উঠানের যা কিছু খড়-কুটা ধুলা-বালি তার দাড়িতে জড়াইয়া উঠানখানাকে সাফ করিয়া দিয়া যায়। শুধু কি তাই! কারও বাড়িতে ছেলের ভাত খাওয়ানি, মেয়ের বিবাহ, বহু লোক খাওয়াইতে হইবে। মাছের জন্য আর জেলের পথ চাহিয়া থাকিতে হইবে না। দাড়িওয়ালা মিঞাকে পুকুরে বা নদীতে নামাইয়া দিলেই হইল। রুই, কাতল, বোয়াল যত মাছ দাড়িওয়ালা মিঞার দাড়িতে আটকাইয়া আসিবে। তারপর ধরিয়া লইয়া যত পারো রান্না করো, খাও। সেই জন্য বউদের মধ্যে দাড়িওয়ালা মিঞার খুব খাতির। ছোটরা কিন্তু গোঁপেশ্বর বাবুকেই ভালোবাসে।
সেবার হইল কি? দেশে আসিল এক নতুন রকমের বাঘ। আজ ওর ছাগল লইয়া যায়, কাল ওর গরু লইয়া যায়। শুধু কি তাই! ছোট ছেলে মায়ের কোলে বসিয়া বোতলে দুধ খাইতেছে, কোথা হইতে বাঘ আসিয়া তাহার হাত হইতে বোতলটি কাড়িয়া লইয়া গেল। বাঘের জ্বালায় ছোটদের বিস্কুট, লজেন্স, চিঁড়ে, মুড়ি কিছুই খাইবার উপায় নাই। কোথা হইতে বাঘ আসিয়া কাড়িয়া লইয়া যায়। শুধু কি তাই। মুন্দিরার মায়ের পানের ডিবা, রহিমের মায়ের তামাক পোড়ার কৌটা, করিম বুড়োর হুঁকো-কলকে কখন যে বাঘ আসিয়া ছোঁ মারিয়া লইয়া গেল, কেউ টের পাইল না। এই কথা রাজার কানে গেল।
রাজা সমস্ত দেশে ঢোল পিটাইয়া দিলেন। যে বাঘ মারিতে পারিবে, তাকে হাজার এক টাকা পুরস্কার আর যে গ্রামে সে থাকে, সে গ্রাম তাকে লাখেরাজ দেওয়া হইবে। অর্থাৎ সে গ্রামের লোক রাজাকে খাজনা দিবে না। যে বাঘ মারিবে তাকেই দিবে। খবর শুনিয়া গোঁপেশ্বর তার গোঁপে তেল দিতে দিতে ভাবিল, যদি বাঘ মারিতে পারি তবে কি মজাই না হইবে! সমস্ত গায়ের লোক আমাকে খাজনা দিবে। আমি পায়ের উপর পা ফেলিয়া কেবল আরাম করিব।
দাড়িওয়ালা মিঞাও তাহার দাড়িতে তা দিতে দিতে ভাবিল, যদি বাঘ মারিতে পারি, তবে কি মজাই না হইবে। হাজার এক টাকার ফুলেল তেল কিনিয়া কেবল দাড়িতে মাখাইব।
সন্ধ্যা হইলে গোঁপেশ্বর বাবু গ্রামের একধারে যাইয়া তাহার গোঁপজোড়া মেলিয়া ধরিয়া বসিয়া রহিল।
দাড়িওয়ালা মিঞা গ্রামের ওই ধারে বনের মধ্যে তাহার দাড়ির জাল ফেলিয়া বাঘের জন্য অপেক্ষা করিতে লাগিল।
রাতের এক প্রহর গড়াইয়া দুই প্রহর হইল। বাঘের কোনো দেখা নাই। দুই প্রহর গড়াইয়া প্রভাত হয় হয়। বাঘের কোনো দেখা নাই। এধারে গোঁপেশ্বর বাবু গোঁপ মেলিয়া, ওধারে দাড়িওয়ালা মিঞা। এমন সময় হনহন করিয়া বাঘ হুংকার করিয়া গোপেশ্বর বাবুর সামনে আসিয়া তাড়া করিল। অমনি আর বাঘ যায় কোথায়? গোঁপেশ্বর বাবু বাঘের গলায় তার গোঁপজোড়া দিয়া গলফাঁস লাগাইয়া দিল। গোঁপসমেত গোঁপেশ্বর বাবু সমেত টানিয়া-হেঁচড়াইয়া বাঘ ছুটিল ওদিক পানে। ওদিকে তো দাড়িওয়ালা মিঞা দাড়ির জাল পাতিয়া বসিয়াই আছে। বাঘ যাইয়া আটকা পড়িল তাহার দাড়ির জালে। দাড়ি ধরিয়া বাঘকে টানিতে টানিতে দাড়িওয়ালা মিঞা যাইয়া রাজসভায় উপস্থিত।
‘মহারাজ! ইনাম, বকশিশ দিন। বাঘ ধরিয়া আনিয়াছি।’ দাড়ির তলা হইতে গোঁপেশ্বর বাবু চিৎকার করিয়া বলে, ‘মহারাজ! ও বাঘ ধরে নাই। আমি বাঘ ধরিয়াছি। এই দেখুন, আমার গোঁপের সঙ্গে বাঘ আটকাইয়া আছে।’ এত টানাহেঁচড়ায় বাঘটি তখন মরিয়া গিয়াছে।
অবাক হইয়া সকলেই দেখিলেন, সত্যিই তো গোঁপেশ্বর বাবুর গোঁপের সঙ্গে বাঘ আটকাইয়া আছে।
তখন এ বলে, আমি বাঘ ধরিয়াছি—ও বলে, আমি বাঘ ধরিয়াছি। অনেক বিচার করিয়া রাজা বলিলেন, তোমরা কেউ কারও চাইতে কম নও। দুইজনেই পুরস্কার পাইবে।
পুরস্কার পাইয়া গোঁপেশ্বর বাবু আর দাড়িওয়ালা মিঞা গ্রামে সুখে বাস করিতে লাগিল।
Read More

(বিজ্ঞান গল্প) অন্য সময় কল্প

4 Comments
Read More

বাঘ মামার বিয়ে

4 Comments

১.

অনেক দিন শিয়াল পণ্ডিতের খোঁজ খবর নাই। বাঘ মামাতো শিয়ালের উপর খ্যাপা। শিয়াল পণ্ডিতও ভয়ে ভয়ে আছে। কবে যে ডাক পড়ে, এই ভয়ে আড়ালে আবডালে শিয়াল পণ্ডিত ঘুরে বেড়ায়। তবে শেষ পর্যন্ত রেহায় পেল না শিয়াল পন্ডিত। ডাক পড়ল শিয়াল পন্ডিতের। 

শিয়াল পন্ডিত তো ভয়ে আধমরা। কিন্তু শিয়াল পন্ডিত তা বুঝতে না দিয়ে একদিন হাঁপাতে হাঁপাতে বাঘ মামার কাছে এসে হাজির। এসেই অনুনয় বিনয় করে বলে, ‘মামা খুব কষ্টে আছি। দিনকাল ভালো যাচ্ছে না। লোকজন মুরগীঘর এখন এমনভাবে বানাচ্ছে, আমি বুঝি শেষ। ক্ষুধার জ্বালায় মরে যাচ্ছি মামা।’

‘তোর তো এখনো কুমিরের মাংসই হজম হয় নি। আমার রাজ্যে তুই এমন বেয়াদপি করলি, তোকে কিভাবে মাফ করব বল। তোকে তো কুমিরের ডেরায় রেখে আসার হুকুম দেব ভাবছি।’

শিয়াল পণ্ডিতের তো একথা শুনে অক্কা যাবার অবস্থা। বাঘ মামাকে নানা অনুনয় বিনয় করে শিয়াল। কিন্তু কোন লাভ হয় না। বাঘ মামা বলে, ‘অনেক জ্বালিয়েছিস তুই আমাকে। কুমির হচ্ছে জলের মোড়ল। আর সেই কুমিরের সাথে বাটপারি এ আমি মেনে নেব না। আজকেই তোকে কুমিরের ডেরায় যেতে হবে।’

শিয়াল পণ্ডিত মনে মনে কল্পনা করে, সে কুমিরের ডেরায় আর কুমিরেরা তাকে ছিঁড়ে-ছুটে খাচ্ছে। ভাবতেই আতকে ওঠে শিয়াল পণ্ডিত।

শিয়াল পণ্ডিত এবার কান্না কাটি করে বলে, ‘মামা, আমি কুমিরের ডেরায় গেলেতো আমি মরেই যাব। মরার আগে আমার যে একটা শেষ ইচ্ছা আছে।’

‘হাজার হলেও তুই আমার ভাগ্নে, তোর শেষ ইচ্ছা আমি পূরণ করব। বল তোর শেষ ইচ্ছা কি?’

‘সেটাতো এখন বলা যাবে না মামা, আমাকে দুই দিন সময় দাও। আমি আমার ইচ্ছা পূরণ করে তারপর ফিরে আসব।’

‘ঠিক আছে, যা। তবে চালাকি করবি না আবার। তাহলে কিন্তু আমিই তোর ঘাড় মটকে দেব।’

‘তা আবার বলতে মামা।’

২.

পরদিন কথা নাই বার্তা নাই, শিয়াল পণ্ডিত তার ডোল পিটিয়ে সারা রাজ্যে জানিয়ে দিল, ‘বাঘ মামার বিয়ে! বাঘ মামার বিয়ে!’

সবাই জিজ্ঞাসা করে, ‘কি পণ্ডিত সাব, কার সাথে মামার বিয়ে দিচ্ছ?’

শিয়াল পণ্ডিত বলে, ‘বিয়ের সময়ই দেখো সবাই। মামার নিষেধ আছে কণের নাম বলতে।’

এ সংবাদ বাঘ মামার কানে যেতেই রেগে অস্থির। শিয়াল পন্ডিতের ডাক পড়ল আবার। শিয়াল পণ্ডিত আসতেই বাঘ মামা তার থাবা দিয়ে শিয়ালের টুটি ধরে বলে, ‘আমি জানি না আর আমার বিয়ে। তোর ঘাড় আমি এখনি মটকে দেব।’

শিয়াল পণ্ডিত বলে, ‘দেখ মামা, আজ হোক আর কাল হোক আমি মরবই। জীবনের প্রতি আমার মায়া নেই। কিন্তু মামা, মরার আগে আমি মামীকে দেখে যেতে চাই।’

এ কথা শুনে বাঘ মামার মন গলে গেল। ভাবল, ভাগ্নে তাহলে মনে মনে আমাকে এত ভালোবাসে। ভাগ্নে তো ঠিকই বলেছে, বয়স তো কম হল না, রাজ্য চালানোর ঝামেলা টানতে টানতে বিয়ে করার কথা তো ভুলেই গেছি।

বাঘ মামা এবার নরম সুরে বলে, ‘বিয়ে তো বুঝলাম, কিন্তু কণে কে? রাজ্যের সবাইতো আমাকে ভয় পায়। আমাকে বিয়ে করবে কে বল?’

শিয়াল পণ্ডিত বলে, ‘মামা ভয় দিয়েই তো সব জয় করতে হয়। কণের চিন্তা তোমার করা লাগবে না। কালকেই বিয়ে, তুমি বিয়ের ব্যবস্থা করো। পরশুতো আবার আমাকে কুমিরের ডেরায় পাঠাবে।’

এদিকে শিয়াল পণ্ডিত সবাইকে যেয়ে বলে দিল, বাঘ মামার কণে পছন্দ হয়ে গেছে। যাকেই পছন্দ হোক না কেন, তাকে বিয়ে করতেই হবে, তা না হলে সবার কপালে কষ্ট আছে। কণের বাড়িতে গিয়ে কণেকে বিষয়টা জানানো হবে।

৩. 

বনের রাজার বিয়ে আর দাওয়াত হবে না। তা কি হয়! বাঘ মামা রাজ্যের সবাইকে দাওয়াত করল। সবাই নাচতে নাচতে বাঘ মামার বিয়েতে চলে আসল। কিন্তু কণের খোঁজ নেই। শিয়াল পণ্ডিতেরও খোঁজ নেই। বাঘ মামা পড়ল বিপাকে। শিয়াল পণ্ডিত কি এবারও তাকে ধোকা দিল!

বাঘ মামা চিন্তায় পড়ে গেল। তবে সূর্য ডোবার ঠিক আগেই শিয়াল পণ্ডিতের দেখা মিলল। তার সাথে একটা হরিণী। শিয়াল পণ্ডিত এসেই বাঘ মামাকে আড়ালে ডেকে বলে, ‘মামা কণের বড় অভাব। তারপর আবার কণেকে হতে হবে সুন্দরী। হাজার হলেও আমার মামী হবে। খুব কষ্টে রাজী করিয়ে তারপর নিয়ে আসতে হল। তাই দেরী হয়ে গেল।’

বাঘ মামা বাইরে বেরিয়ে নাদুস-নুদুস হরিণীটির দিকে তাকাতেই জিভে জল চলে আসে। তারপর শিয়াল পণ্ডিতকে বলে, ‘ভাগ্নে, তোর পছন্দের তারিফ করতে হয়।’

বাঘ করছে হরিণীকে বিয়ে। বিষয়টা মানায় না। তবু সবাই আনন্দ-উল্লাস করে, কারণ পাছে আবার যদি বাঘ ঘাড় মটকে দেয় এই ভয়ে।

পরদিন সকালে সেজে-গুঁজে চোখে-মুখে কান্না নিয়ে শিয়াল পণ্ডিত হাজির বাঘ মামার কাছে। কারণ আজকেই কুমিরের ডেরায় যেতে হবে তাকে। শিয়াল পণ্ডিত যেয়ে দেখে, বাঘ আছে ফুরফুরে মেজাজে। শিয়ালকে দেখেই বাঘ তার ধারলো দাঁত বের করে হাসতে হাসতে বলে, ‘ভাগ্নে আয়। তোর অপেক্ষাই করছিলাম। পারলে আরেকটা বিয়ে দিয়ে দে না আমায়। জানিস তো আগের মত দৌড়াতে পারি না এখন।’

ফুরফুরে মেজাজে এসব নানান কথা বলতে বলতে বাঘ ভুলেই যায় শিয়াল পণ্ডিতকে কুমিরের ডেরায় পাঠানোর কথা। শিয়াল পণ্ডিতও বুঝল টোপে কাজ হয়েছে। এ যাত্রায় রক্ষা পেল শিয়াল পণ্ডিত।

বাঘ মামার কাছ থেকে ফেরার পথে শিয়াল পণ্ডিত ভাবল, কিছুদিন শান্তিতে থাকা যাবে তাহলে।

----সমাপ্ত---

Read More

বাঘ মামার বিয়ে

1 Comment

১.

অনেক দিন শিয়াল পণ্ডিতের খোঁজ খবর নাই। বাঘ মামাতো শিয়ালের উপর খ্যাপা। শিয়াল পণ্ডিতও ভয়ে ভয়ে আছে। কবে যে ডাক পড়ে, এই ভয়ে আড়ালে আবডালে শিয়াল পণ্ডিত ঘুরে বেড়ায়। তবে শেষ পর্যন্ত রেহায় পেল না শিয়াল পন্ডিত। ডাক পড়ল শিয়াল পন্ডিতের। 

শিয়াল পন্ডিত তো ভয়ে আধমরা। কিন্তু শিয়াল পন্ডিত তা বুঝতে না দিয়ে একদিন হাঁপাতে হাঁপাতে বাঘ মামার কাছে এসে হাজির। এসেই অনুনয় বিনয় করে বলে, ‘মামা খুব কষ্টে আছি। দিনকাল ভালো যাচ্ছে না। লোকজন মুরগীঘর এখন এমনভাবে বানাচ্ছে, আমি বুঝি শেষ। ক্ষুধার জ্বালায় মরে যাচ্ছি মামা।’

‘তোর তো এখনো কুমিরের মাংসই হজম হয় নি। আমার রাজ্যে তুই এমন বেয়াদপি করলি, তোকে কিভাবে মাফ করব বল। তোকে তো কুমিরের ডেরায় রেখে আসার হুকুম দেব ভাবছি।’

শিয়াল পণ্ডিতের তো একথা শুনে অক্কা যাবার অবস্থা। বাঘ মামাকে নানা অনুনয় বিনয় করে শিয়াল। কিন্তু কোন লাভ হয় না। বাঘ মামা বলে, ‘অনেক জ্বালিয়েছিস তুই আমাকে। কুমির হচ্ছে জলের মোড়ল। আর সেই কুমিরের সাথে বাটপারি এ আমি মেনে নেব না। আজকেই তোকে কুমিরের ডেরায় যেতে হবে।’

শিয়াল পণ্ডিত মনে মনে কল্পনা করে, সে কুমিরের ডেরায় আর কুমিরেরা তাকে ছিঁড়ে-ছুটে খাচ্ছে। ভাবতেই আতকে ওঠে শিয়াল পণ্ডিত।

শিয়াল পণ্ডিত এবার কান্না কাটি করে বলে, ‘মামা, আমি কুমিরের ডেরায় গেলেতো আমি মরেই যাব। মরার আগে আমার যে একটা শেষ ইচ্ছা আছে।’

‘হাজার হলেও তুই আমার ভাগ্নে, তোর শেষ ইচ্ছা আমি পূরণ করব। বল তোর শেষ ইচ্ছা কি?’

‘সেটাতো এখন বলা যাবে না মামা, আমাকে দুই দিন সময় দাও। আমি আমার ইচ্ছা পূরণ করে তারপর ফিরে আসব।’

‘ঠিক আছে, যা। তবে চালাকি করবি না আবার। তাহলে কিন্তু আমিই তোর ঘাড় মটকে দেব।’

‘তা আবার বলতে মামা।’

২.

পরদিন কথা নাই বার্তা নাই, শিয়াল পণ্ডিত তার ডোল পিটিয়ে সারা রাজ্যে জানিয়ে দিল, ‘বাঘ মামার বিয়ে! বাঘ মামার বিয়ে!’

সবাই জিজ্ঞাসা করে, ‘কি পণ্ডিত সাব, কার সাথে মামার বিয়ে দিচ্ছ?’

শিয়াল পণ্ডিত বলে, ‘বিয়ের সময়ই দেখো সবাই। মামার নিষেধ আছে কণের নাম বলতে।’

এ সংবাদ বাঘ মামার কানে যেতেই রেগে অস্থির। শিয়াল পন্ডিতের ডাক পড়ল আবার। শিয়াল পণ্ডিত আসতেই বাঘ মামা তার থাবা দিয়ে শিয়ালের টুটি ধরে বলে, ‘আমি জানি না আর আমার বিয়ে। তোর ঘাড় আমি এখনি মটকে দেব।’

শিয়াল পণ্ডিত বলে, ‘দেখ মামা, আজ হোক আর কাল হোক আমি মরবই। জীবনের প্রতি আমার মায়া নেই। কিন্তু মামা, মরার আগে আমি মামীকে দেখে যেতে চাই।’

এ কথা শুনে বাঘ মামার মন গলে গেল। ভাবল, ভাগ্নে তাহলে মনে মনে আমাকে এত ভালোবাসে। ভাগ্নে তো ঠিকই বলেছে, বয়স তো কম হল না, রাজ্য চালানোর ঝামেলা টানতে টানতে বিয়ে করার কথা তো ভুলেই গেছি।

বাঘ মামা এবার নরম সুরে বলে, ‘বিয়ে তো বুঝলাম, কিন্তু কণে কে? রাজ্যের সবাইতো আমাকে ভয় পায়। আমাকে বিয়ে করবে কে বল?’

শিয়াল পণ্ডিত বলে, ‘মামা ভয় দিয়েই তো সব জয় করতে হয়। কণের চিন্তা তোমার করা লাগবে না। কালকেই বিয়ে, তুমি বিয়ের ব্যবস্থা করো। পরশুতো আবার আমাকে কুমিরের ডেরায় পাঠাবে।’

এদিকে শিয়াল পণ্ডিত সবাইকে যেয়ে বলে দিল, বাঘ মামার কণে পছন্দ হয়ে গেছে। যাকেই পছন্দ হোক না কেন, তাকে বিয়ে করতেই হবে, তা না হলে সবার কপালে কষ্ট আছে। কণের বাড়িতে গিয়ে কণেকে বিষয়টা জানানো হবে।

৩. 

বনের রাজার বিয়ে আর দাওয়াত হবে না। তা কি হয়! বাঘ মামা রাজ্যের সবাইকে দাওয়াত করল। সবাই নাচতে নাচতে বাঘ মামার বিয়েতে চলে আসল। কিন্তু কণের খোঁজ নেই। শিয়াল পণ্ডিতেরও খোঁজ নেই। বাঘ মামা পড়ল বিপাকে। শিয়াল পণ্ডিত কি এবারও তাকে ধোকা দিল!

বাঘ মামা চিন্তায় পড়ে গেল। তবে সূর্য ডোবার ঠিক আগেই শিয়াল পণ্ডিতের দেখা মিলল। তার সাথে একটা হরিণী। শিয়াল পণ্ডিত এসেই বাঘ মামাকে আড়ালে ডেকে বলে, ‘মামা কণের বড় অভাব। তারপর আবার কণেকে হতে হবে সুন্দরী। হাজার হলেও আমার মামী হবে। খুব কষ্টে রাজী করিয়ে তারপর নিয়ে আসতে হল। তাই দেরী হয়ে গেল।’

বাঘ মামা বাইরে বেরিয়ে নাদুস-নুদুস হরিণীটির দিকে তাকাতেই জিভে জল চলে আসে। তারপর শিয়াল পণ্ডিতকে বলে, ‘ভাগ্নে, তোর পছন্দের তারিফ করতে হয়।’

বাঘ করছে হরিণীকে বিয়ে। বিষয়টা মানায় না। তবু সবাই আনন্দ-উল্লাস করে, কারণ পাছে আবার যদি বাঘ ঘাড় মটকে দেয় এই ভয়ে।

পরদিন সকালে সেজে-গুঁজে চোখে-মুখে কান্না নিয়ে শিয়াল পণ্ডিত হাজির বাঘ মামার কাছে। কারণ আজকেই কুমিরের ডেরায় যেতে হবে তাকে। শিয়াল পণ্ডিত যেয়ে দেখে, বাঘ আছে ফুরফুরে মেজাজে। শিয়ালকে দেখেই বাঘ তার ধারলো দাঁত বের করে হাসতে হাসতে বলে, ‘ভাগ্নে আয়। তোর অপেক্ষাই করছিলাম। পারলে আরেকটা বিয়ে দিয়ে দে না আমায়। জানিস তো আগের মত দৌড়াতে পারি না এখন।’

ফুরফুরে মেজাজে এসব নানান কথা বলতে বলতে বাঘ ভুলেই যায় শিয়াল পণ্ডিতকে কুমিরের ডেরায় পাঠানোর কথা। শিয়াল পণ্ডিতও বুঝল টোপে কাজ হয়েছে। এ যাত্রায় রক্ষা পেল শিয়াল পণ্ডিত।

বাঘ মামার কাছ থেকে ফেরার পথে শিয়াল পণ্ডিত ভাবল, কিছুদিন শান্তিতে থাকা যাবে তাহলে।

----সমাপ্ত---

Read More